প্রযুক্তির সহায়তায় ক্যারিয়ার গঠন


এখন সর্বত্র প্রযুক্তির জয়জয়কার। প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলছে। আমাদের জীবনমান অনেক সহজ করে দিয়েছে প্রযুক্তি। অবস্থা এমন হয়েছে যে প্রযুক্তিহীন দিন যাপন আমরা কল্পনাও করতে পারি না। এই প্রযুক্তি আমাদের জীবনে যেমন অনেক সহজ এবং স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছে তেমনি আমাদেরকে মানসম্মত ও... কর্মসংস্থান করে দিয়েছে। এখন আমরা অত্যাধিক জরুরী এবং সকলের জন্যে উপযোগী কয়েকটি ক্ষেত্র সম্বন্ধে জানব।

ডাটা এন্ট্রি
ডাটা এন্ট্রি বেসিক পর্যায়ের একটি কাজ। এটা বিভিন্নভাবে করা হয়। প্রাথমিকভাবে বলা যায়, কোনো কিছু টাইপ করা। আমরা দরকারী কোনো নথিপত্র, দলিল-দস্তাবেজ এবং আবেদনপত্রসহ বিভিন্ন জিনিস কম্পিউটার দিয়ে টাইপ করি। ডাটা এন্ট্রির কাজ লোকাল বিভিন্ন কম্পিউটার দোকানে করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও টাইপিস্ট রেখে থাকে। তাদের দরকারী বিভিন্ন ডকুমেন্ট টাইপ করার জন্যে। আর অনলাইনেও এর চাহিদা রয়েছে। অনেক ফ্রিল্যান্সার আছে তারা শুধুমাত্র ডাটা এন্ট্রির কাজ দিয়েই মাসে চল্লিশ-পঞ্চাশ হাজার টাকা ইনকাম করে। ডাটা এন্ট্রির কাজ করার জন্যে বহুল ব্যবহৃত একটি অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার হল, মাইক্রোসফট অফিস অ্যাপ্লিকেশন।

গ্রাফিক্স ডিজাইন
এটা সম্বন্ধে আমরা কমবেশি জানি। আমরা রাস্তাঘাটের দেয়ালে কিংবা বিদ্যুতের খাম্বায় যে আকর্ষণীয় অনেক পোষ্টার সাঁটা দেখে থাকি অথবা জুমআর নামাজ পড়ে মসজিদ হতে বের হওয়ার পর অনিচ্ছাসত্তে¦ও কিছু ছেলে হাতে লিফলেট ধরিয়ে দেয়। এই পোস্টার এবং লিফলেটে অনেক চমৎকার ডিজাইন করা হয়েছে। সেগুলো গ্রাফিক্স ডিজইনের অন্তর্ভুক্ত। বইয়ের প্রচ্ছদ ডিজাইনও গ্রাফিক্স ডিজাইন। গ্রাফিক্স ডিজাইন আমাদের সবারই কমবেশি দরকার হয়। আর এটা লোকাল মার্কেট কিংবা অনলাইন মার্কেট উভয় ক্ষেত্রে খুব চাহিদা রয়েছে। অনলাইন মার্কেট প্লেসে মানসম্মত একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার ঘন্টায় ৩০-৫০ ডলার ইনকাম করে থাকেন। সময়ভেদে আরো বেশি। একজন দক্ষ গ্রাফিক্স ডিজাইনারের অনেক চাহিদা থাকে। গ্রাফিক্স ডিজাইনের দু’টি জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত সফটওয়্যার হল, এডোবি ইলাস্ট্রেটর ও এডোবি ফটোশপ।

ওয়েব ডিজাইন
ওয়েব ডিজাইন বা ওয়েবসাইট ডিজাইন, নামে বুঝা যায় সেটার কী কাজ। এখন ইন্টারনেটে সবকিছু পাওয়া যায়। এটা আমাদের কমন ডায়লগ। আসলেই ইন্টারনেটে সব পাওয়া যায়। ইন্টারনেটের কোথায় পাওয়া যায়? এই প্রশ্নটির উত্তর হল, ইন্টারনেটে লক্ষ কোটি ওয়েবসাইট রয়েছে। প্রতিটি ওয়েবসাইট ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিদ্যমান। সেখানে আমাদের কাঙ্খিত জিনিস পেয়ে থাকি। দিন দিন ইন্টারনেটের সেবা বিস্তৃত হচ্ছে তেমনি ওয়েবসাইটও ক্রমাগত তৈরি হচ্ছে। অনলাইনে সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন কাজের একটি হল, ওয়েবসাইট ডিজাইন। দক্ষ ওয়েবসাইট ডিজাইনারের চাহিদা খুব বেশি। পারিশ্রমিকও মানসম্মত ও মর্যাদাকর। একজন ওয়েবসাইট ডিজাইনারের ঘন্টায় ৪০-৬০ ডলার ইনকাম করে থাকেন। বলা যায় আরো বেশি। আর লোকাল মার্কেটেও কাজ করা যায় তবে কম। ওয়েব ডিজাইন শেখার ক্ষেত্রে এডোবি ফটোশপ এবং কয়েকটি ল্যাঙোয়েজ শিখতে হবে। এইসব আসলে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গোয়েজের মতো কঠিন না। যেমন, এইচটিএমএল, সিএসএস এবং জাভাস্ক্রিপ্ট সাথে পিএইচপি এবং মাইএসকিউএল ল্যাঙোয়েজের বেসিক ধারণা রাখলে খুব ভালো।

ওয়েব ডেভলাপিং
ওয়েব ডেভলপারের কাজ হল ওয়েব ডিজাইনারের ডিজাইনকৃত ওয়েবসাইটকে ইন্টারনেটের উপযোগী করা। ওয়েব ব্রাউজার এবং মোবাইল ফোন দিয়ে যাতে সেটা দেখা এবং ব্যবহার করা যায়। আনুষাঙ্গিক আরো অনেক কাজ আছে যেগুলো ওয়েব ডেভলাপাররা করে থাকেন। ওয়েব ডিজাইনারের মতো ওয়েব ডেভলপারেরও অনেক চাহিদা রয়েছে অনলাইন মার্কেট প্লেসে। ওয়েব ডেভলপারের ইনকামও ঈর্ষা জাগানিয়া। ওয়েব ডেভলাপিং করতে কয়েকটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গোয়েজ জানা থাকতে হবে। বিশেষ করে পিএইচপি এবং মাইএসকিউএল ভালোমতো দক্ষ হতে হবে।

ডিজিটাল মার্কেটিং
আমরা জানি যেকোনো পণ্য বেচাকেনাকে মাকেটিং বলে। সেটা যদি ইন্টারনেটের মাধ্যমে হয়ে থাকে তাহলে সেটাকে বলে ডিজিটাল মার্কেটিং। একজন ডিজিটাল মার্কেটার কোনো কোম্পানীর পণ্যকে সোশ্যাল মিডিয়া, ব্লগ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কাঙ্খিত ভোক্তার কাছে ঐ কোম্পানীর পণ্যের অ্যাডভার্টাইজ করেন। তখন কোম্পানী তাকে নির্দিষ্ট হারে কমিশন দিয়ে থাকে। এটা অনেক স্মার্ট একটি কাজ। দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। আর এর চাহিদা আরো বাড়বে। কারণ, প্রযুক্তির যত বিস্তার হবে ডিজিটাল মার্কেটিং তত সমৃদ্ধ হবে। একজন দক্ষ ডিজিটাল মার্কেটার হতে হলে পণ্য, কোম্পানী এবং ভোক্তা সম্বন্ধে জানতে হবে। আর এসবের জন্যে তো ইন্টারনেট আছেই। ডিজিটালের মার্কেটিংয়ের অনেক শাখা আছে। যেমন, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ই-মেইল মার্কেটিং, ব্লগ মার্কেটিং ইত্যাদি। আর সবক’টি অত্যন্ত চাহিদাসম্পন্ন এবং সমৃদ্ধ।

এসইও
আমরা যখন কোনো কিছু জানতে চাই। তখন ওয়েব ব্রাউজার ওপেন করে গুগলে সার্চ করি। গুগল আমাদের কাঙ্খিত বিষয়টি যে যে ওয়েবসাইটে আছে তা ব্রাউজারে দেখায়। আমরা যে ওয়েবসাইটকে পারফেক্ট মনে করি সেখানে ঢুকি। আমাদের কাঙ্খিত বিষয়টি জানতে পারি। এই যে গুগল আমাদের হেল্পটা করেছে। গুগল কিন্তু একটি ওয়েবসাইট। এই ওয়েবসাইটটা অন্যান্য ওয়েবসাইটের মতো নয়। এটা ওয়েব-ডিরেক্টরির কাজ করে। কোন ওয়েবসাইটে কী তথ্য-উপাত্ত আছে তা জেনে রাখে এবং ইউজারের প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে প্রদর্শন করে। এই ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিন বলে। গুগলের মতো আরো অনেক সার্চ ইঞ্জিন রয়েছে। সবচেয়ে ব্যবহৃত হয় গুগল সার্চ ইঞ্জিন। যারা ইন্টারনেটে ওয়েবসাইট প্রকাশ করে তারা চেষ্টা করে তাদের ওয়েবসাইট যাতে সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পাতায় দেখাতে। কারন দেখা গেছে যে, ব্যবহারকারীরা প্রথম পাতায় তাদের দরকারী তথ্য-উপাত্ত না পেলে এই টপিকে সার্চ না করে ভিন্ন টপিকে সার্চ করে। একজন সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজারের কাজ হল, ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনে ভালো অবস্থান তৈরি করা। এটা পরিষ্কার, প্রতিদিন হাজার হাজার ওয়েবসাইট তৈরি হচ্ছে। নতুন কিংবা পুরোনো প্রতিটি ওয়েবসাইটের জন্যে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশ (এসইও) দরকার পড়বে। একজন যোগ্য ও দক্ষ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজারের ঘন্টায় ২০-৩০ ডলারেরও বেশি ইনকাম হয়ে থাকে।

ভিডিও এডিটিং
এটা শেখা বর্তমানে খুব দরকার। কারন, দিন দিন মানুষ ভিডিও দেখা এবং তৈরি করার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ডকুমেন্টারি তৈরি হয়। আবার অনেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে পাঁচ মিনিট, দশ মিনিট কিংবা এক ঘন্টার ভিডিও তৈরি করে। শুধু ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও করলেই হয় না, ভিডিও এডিটিংও করতে হয়। আর এটা খুব দক্ষতার সাথে করতে হয়। এজন্য একজন ভিডিও এডিটরের অনেক চাহিদা রয়েছে। অনলাইন এবং অফলাইন উভয় মার্কেট প্লেসে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। একজন দক্ষ ভিডিও এডিটর যেরকম লোকাল মার্কেটে ভালো বেতন পান তেমনি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট প্লেসেও অনেক চড়া রেইট পেয়ে থাকেন।

প্রেজেন্টেশন
এটা না বললেই নয়। কোনো কিছু প্রেজেন্টেশন করা আমাদের সবসময় দরকার পড়ে। বিশেষ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এটা নিত্য দরকার পড়ে। সুন্দর করে প্রেজেন্টেশনের দ্বারা যেকোনো ধরণের প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়ে থাকে। এই কারনে প্রেজেন্টেশনে দক্ষতা-সম্পন্ন লোকের খুব দরকার হয়। প্রেজেন্টেশন সাধারণত মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট দিয়ে বেশি করা হয়ে থাকে।

প্রযুক্তির সহায়তায় ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে আরো অনেক মাধ্যম আছে। সবগুলো আমাদের দ্বারা সম্ভব নাও হতে পারে। এছাড়াও অর্থ, সময় এবং মেধার দিকটাও বিবেচনায় রাখতে হবে। উপরোল্লিখিত কাজ শিখতে তেমন অর্থ এবং সময় খরচ হয় না। তেমনি যেকোনো লোক পরিশ্রম করার দ্বারা এই কাজগুলো শিখতে পারবে।

Comments