জীবনের পথপরিক্রমা

প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ সাহেবের কোনো একটি লেখায় পড়েছিলাম, ‘প্রকৃতির কাছে কোনো কিছু চাইতে নেই। প্রকৃতি কাউকে নিরাশ করে না।এই কথাটা পড়ে আমি খুব আশ্চর্য হয়েছি। কারণ এই কথাটার সাথে কোনো এক মাওলানা সাহেবের মুখের কথা পুরোপুরি মিলে যায়। কথাটা কুরআন-হাদিসে আছে কিনা বা তিনি কুরআন-হাদিস থেকে বলেছেন কিনা জানি না। কথাটা এরকম, আল্লাহ পাকের কাছে তুমি যা চাইবে তা পাবে। আজই পেয়ে যাবে! এরকম না-ও হতে পারে। তবে একদিন তোমার এই খায়েশটা পূর্ণ হবে। এরকম একটি স্তবকও শুনেছিলাম, ‘ডাকার মতো ডাকলে খোদা কেমনে শোনে না।
আমার কথার উদ্দেশ্য হল, মনে মনে যেটা কামনা করা হয়, সেটা একদিন পূর্ণ হয়ই। তবে যেটা কামনা করা হচ্ছে তার ওপর কিছুটা হলেও স্টিল থাকতে হবে। বাঁধা-বিপত্তি, হুমকি-ধামকি, ধরপাকড় আসবে। সঙ্গী-সাথি, পরিজন একে একে চলে যেতে পারে। তবে সেটা ক্ষণিকের জন্যে। কারণ, বন্ধু-বান্ধবরা সবসময়, সর্বকালে সাকসেসফুল অবস্থানে দেখতে চায়। কেউ একজন যখন নতুন কিছু করার জন্যে অমানুষিক কষ্ট করছে, সীমাহীন চেষ্টা-প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে। সমাজ, পরিবার, আত্মীয়-স্বজন নরমাল চোখে দেখছে, এ তো গোল্লায় গেছে। এর ভবিষ্যৎ অন্ধকারচ্ছন্ন। তখন একে একে আশপাশের প্রায় সকলেই কেটে পড়ে। সকলেই একটি বাক্যে নিজেদের সান্ত¦না খোঁজে এবং চারপাশে বলে বেড়ায়, ব্যাটা নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারছে এখানে কিছু করার নেই।
জীবনের চলার পথে অনেক সময় কিছু মানুষরূপী জন্তু-জানোয়ার পাওয়া যায়। এদেরকে সাদা চোখে দেখলে মনে হতে পারে, আহ্ বেচারা, ভাঁজা কৈ উল্টিয়ে খেতে পারে না। দুনিয়ার পাপ-পঙ্কিলতার ধারে-কাছেও কখনো, কোনোদিন যায় নি। কিন্তু এই বেচারা টাইপের মহাশয়গণ যে একটি সমাজকে তিলে তিলে নগ্ন, কলুষিত করে যাচ্ছে নিরবে, নিভৃতে। সেটা কেউ ধরতে পারে না। যখন ধরতে পারে, তখন সুরমা, কুশিয়ারা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে।
এই বেচারাদের অপঘাত মোকাবিলা করা বড়ই দুঃসাধ্য। কারণটা আগেই বলেছি, এরা সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে কিছু করে না। তাদের কাজ-কারবার সকলের দৃশ্যমান চোখের অন্তরালে। যার কারণে সমাজের চোখে একজন পরোপকারি, সমাজসেবক, ভালো মানুষ সময়ে সময়ে কালো, অন্ধকারের বার্তাবহক হিসেবে চিহ্নিত হন। নিরহ টাইপের ভয়ঙ্কর মানুষগুলো হয়ে ওঠেন, সবচেয়ে হিতাকাক্সিক্ষ।
কথা আছে, ফেরাউনের অপশক্তি যেরকম মুসা আ. এর লাঠিও সেরকম হওয়া চাই। যার কারণে, সমাজ, দেশ, জাতির হিতাকাক্সিক্ষদেরও সেরকম প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

অপবাদ আরোপ, কালেমা লেপন, পরচর্চা আমাদের মনুষ্যসমাজের একটি অতি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। এটি আমাদের ধর্মে অত্যন্ত গর্হিত কাজ বলে স্বীকৃতি পেলেও আমরা এটিকে আষ্টেপৃষ্টে লালন, পালন করে আসছি। এই কাজগুলো কিন্তু ঐ বেচারাগণকরে থাকেন। সরাসরি তারা কিছু করে না। শেকড়ে ঘা বসিয়ে দেয়। ব্যাপারটি প্রায় এরকম, একটি জিবাণু ছেড়ে দিলেই হলো। জিবাণু খুঁজে পাবে তার চলাফেরার অলিগালি ও থাকা, খাওয়ার বাসস্থান।

Comments