কয়েকদিন আগে
কওমি মাদরাসাভিত্তিক একটি ইসালামিক রাজনৈতিক দল দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। দুই ভাগে
বিভক্ত বলাটা মনে হয় ঠিক হচ্ছে না। এভাবে বলা যেতে পারে, যাদেরকে একসময় মাঠে-ময়দানে (এবং সংসদে) দেখা গেছে। তাদেরকে দলে হঠাৎ
নিষ্ক্রিয় করায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে নিজেরা কাউন্সিল করে ফেলেছেন। তাদের সহযাত্রী,
অনুসারী এবং মাইন্ডেড লোকদের দিয়ে দল সাজিয়ে নিয়েছেন।
আমি একসময় এই
দলের জবরদস্ত সাপোর্টার ও কর্মী ছিলাম। মাদরাসায় নিয়মিত পড়ার সময় এই দল সম্বন্ধে
এত শুনেছি যে, দলটি মাথায়-মগজে ঢুকে গেছে। এক সময় বুঝতে পারলাম,
ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ভরপুর এই দলে ওভার লোডেড শুধু গলাবাজি-ই আছে।
গঠনমূলক কোনো কাজ নেই। আর আমি চেয়েছিলাম, গঠনমূলক কাজ।
তাই সাপোর্টার থাকলেও কর্মী বা দায়িত্বশীল হওয়ার কামনা ত্যাগ করে ফেলি। আর ইচ্ছা
থাকা সত্ত্বেও অন্য কোনো দলে যুক্ত হতে পারিনি। কারন যেকোনো আলাপ-আলোচনায় এই দলের
কথা মানসপটে ভেসে বেড়ায়। একজনকে মনে রেখে আরেকজনকে তো কবুল করা যায় না। অন্তত আমি
পারিনি।
ভেঙ্গে যাক বা
ত্যাগীরা দল গঠন করে ফেলুক। আমার কিচ্ছু যায় আসে না। কথা হল, মাঝে মধ্যে ফেসবুকের প্রতি অভিমান চেপে বসে। ফেসবুকে ঢুকার সাথে সাথে
ফেসবুকের নিয়মানুযায়ী আমার ফ্রেন্ডলিস্টের পরিচিতদের কাজ-কারবার চোখের সামনে চলে
আসে।
‘কাজীরা কাজ করে,
কুকুর ঘেউ ঘেউ করে’। আমার যতদূর ধারণা,
কথাটি প্রবাদ-প্রবচন বা ধর্মীয় কোনো মূল্যবান বানী না। কার মুখে
যেন শুনেছিলাম। ভুলেও গিয়েছিলাম। এই ইসলামিক রাজনৈতিক দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা
সেটা বাস্তবে দেখার, শোনার এবং বলার সুযোগ করে দিলেন।
দলে অচ্ছুৎ হয়ে
যাওয়া নেতাকর্মীরা নতুন করে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম তৈরি করছেন। নি¤œপদের, বিভাগীয় বা জেলা পর্যায়ের
নেতাকর্মীরা মাঝারী থেকে বড় লেভেলের পদ পাচ্ছেন। খুবই স্বাভাবিক কারনে মিষ্টিমুখ
করছেন। আনন্দ প্রকাশ করছেন। ফেসবুকে তারা এইসব মহা পুণ্যবান ছবি, সেলফি ও মনের হর্ষধ্বনির ফুলঝুরি পোস্ট করছেন।
অপজিট সাইটের
নেতাকর্মীরা এগুলো দেখে কি হাততালি দেবে? তারাও তাদের কাজ-কাম
শুরু করে দিয়েছেন। জোর প্রতিবাদ করছেন। এই প্রতিবাদের ভাষা এবং আচরণের সাথে
ইতিহাসের কিছু মিল পাওয়া যায়। ইতিহাসটা এরকম। মহানবী সা. ছিলেন মক্কার লোকজনের
কাছে আল-আমিন, আস-সাদিক। তরুণ বয়সেও মহাপুরুষ। মক্কার
চিরায়ত সমাজের সম্ভ্রান্ত হিরো। যখন তাওহীদের প্রচার শুরু করলেন। ঠিক তখন তিনি হয়ে
গেলেন ভিলেন, পাগল, দেশদ্রোহী,
কান্ডজ্ঞানহীন।
আমার চাচাতো এক
বড়ভাই একদিন কাদের ওপর যেন বেজায় চটেছেন। এই সময় আমি তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম।
বড়ভাই তার ওপর মাওলানা সাব। তাঁকে সম্মান দিতে গিয়ে একেবারে সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে
যাচ্ছিলাম। তখন শুনলাম বিড়বিড় করে কী বলছেন। আমি কৌতূহলী হয়ে সম্মানটম্মান ঝেড়ে
ফেলে তার একেবারে কাছে চলে এলাম। শুনলাম, “ছাগলরা কিতা মনে খরে?
খালি মেসাব ওয়ায় কুনতা খইতে ফাররাম না। আননায় আমরা কিতা খম গাইল
জানিনি। গাইল আরম্ব খরলে খবর কিতা হাশরর মাট থাকিও ছৌদ্দগুষ্টি আইব্বা এনতানরে
উদ্দার খরাত।”
তার প্রতি অশেষ
শ্রদ্ধা আর ভালবাসা। তিনি মিথ্যা বলেননি। বড়ভাইদের কাছ থেকে মিথ্যা, ছল, প্রতারণা এসব কেউ কখনো আশা করে না। আমিও
করি না।
উল্লেখ্য, আমার চাচাতো ভাই যে এই কথাটাই বলেছেন। এরকম নাও হতে পারে। তবে খোলাসা
কথা মোটামুটি এরকমই।
![]() |
kamruddin-yahia.blogspot.com |
Comments
Post a Comment