জীবন-ভাবনা

জীবন চলার পথে আমাদের অনেকের সাথে পরিচয় হয়। এই পরিচয়টা এমনও হতে পারে সুন্দরভাবে জীবনের সায়াহ্ণ পর্যন্ত বলবৎ আছে। অনেক সময় এমনও হয়, পরিচয়-ই আমাদের কাল হয়ে দাঁড়ায়। সম্পর্কে তীক্ততার মাত্রা চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। এমনও হয়, আমাদের মাঝে সাপে-নেউলে বা দা-কুমড়ার মতো নেতিবাচক সম্পর্ক বিরাজ করে।
আমরা মানুষ। সামাজিক জীব। সমাজের আরো দশজনের সাথে আমাদের চলতে হয়। কথা-বার্তা, আলাপ-আলোচনা, সুখ-দুঃখের বাতচিত হবেই। সমাজের বিভিন্নজনের ভিন্ন চিন্তা, কর্ম, কথা-বার্তাকে আমরা পাঁচ আঙ্গুলের সাথে উপমা টানি। আল্লাহ পাক প্রতিটি মানুষকে ভিন্ন ধাঁচের, ভিন্ন চিন্তার, ভিন্ন লেহাজের করে তৈরি করেছেন। সমাজবদ্ধ হয়ে চলতে গেলে আমাদের অনেক কম্প্রোমাইজ করতে হয়। কখনোসখনো স্যাক্রিফাইসের দরকার পড়ে। আমরা যারা এটা নির্দ্বিধায় করতে পারি, তারাই আসলে সামাজিক ক্ষেত্রে পুরোপুরি সফল।
অনেকের ওপর আমদের রাগ, দুঃখ, অভিমান থাকবে। এটা মানুষের প্রকৃতিগত আবেগ। এটা থাকবেই। তার মানে এটা না যে, তাকে যা তা বলে গালাগালি করব, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করব। তাহলে তো কম্পোমাইজ, স্যাক্রিফাইসের কোনো মূল্যই থাকল না।
আমরা যাদেরকে বড় হিসেবে মানি। তাদের ওপর আমরা ভালো জিনিষের আশা করি। অনেক সময় একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করে মাথা গুঁজে বসে থাকি। একসময় দেখা গেল, বড়রা আমাদের সাথে প্রতারণা করছে, ধোঁকা দিচ্ছে। তখন আমরা রাগে, ক্ষোভে ফেটে পড়ি। কেউ কেউ একবুক দুঃখ, ব্যথা নিয়ে হারিয়ে যাই অচিন কোনো পথে। এই উভয়টাই আমাদের জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। আমরা ভুলে যাই, ওরা মানুষ, ফেরেশতা না।
রাগ, দুঃখ, অভিমান থাকবে। এগুলো প্রকাশের ভাষাও আছে। একজন আমার সাথে খারাপ আচরণ করছে, আমিও কি তাকে খারাপ কথা বলে, আচরণ করে প্রতিশোধ নিব? তাহলে তো সমাজে বিশৃঙ্খলা, হাঙ্গামা, বিবাদ তৈরি হবে। দা-কুমড়ার সম্পর্ক বিরাজ করবে।
আমাদের সবসময় একটি কথা মাথায় রাখতে হবে। আল্লাহ পাক আমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য এই পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। একজন অশালীন কাজ করছে এটা যেমন আল্লাহ পাক দেখছেন তেমনি আমার অশালীন প্রতিশোধটাও দেখছেন।

একজনের খারাপ আচরণের প্রতিশোধ ভালো আচরণের বিকল্প কখনো হয়নি, হচ্ছে না আর ভবিশ্যতেও হবে না।

Comments