ট্রল

সময়টা তখন ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাস। সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণজাগরণ মঞ্চ স্থাপিত হয়। তারা তুই রাজাকার তুই রাজাকার বলে বলে গলা ফাটাচ্ছে। আমাদের বাসা ও মাদরাসা কাছেই নয়াসড়কে ছিল। আমি প্রায় প্রতিদিন সেদিকে যেতাম। আমি তখন মুক্তিযুদ্ধসংশ্লিষ্ট কিছু বই ইতিমধ্যে পড়ে ফেলেছি। যার কারনে রাজাকারদের প্রতি আমার ঘৃণাই ছিল।
একদিন জমিয়তের এক ভাইয়ের সাথে মোটামুটি ঝগড়া বেঁধে গেল। এখানে বলে রাখি, আমিও তখনকার ছাত্রজমিয়তের মহানগর সেক্রেটারী বিলাল ভাই আর ছাত্রনেতা কায়সান মাহমুদের কল্যাণে ছাত্রজমিয়তে অ্যাক্টিভ না হলেও মিটিং মিছিলে যেতাম ।
যে ভাইয়ের সাথে ঝগড়া বাঁধল। তিনি আমাকে দেখে ফেললেন চৌহাট্টা পয়েন্টে। বললেন, এখানে কী কর। বললাম দেখতে এসেছি। বললেন, দেখছো, কত বড় নাস্তিকের বাচ্ছারা। দাড়িওয়ালা লোকদের কার্টুন বানিয়ে মিছিল করছে।
তখন আমি নিজেকে মস্তবড় দার্শনিক মনে করতাম। চেহারায় বিজ্ঞের ভাব ফুটিয়ে রাখতাম। ভাইজানের দুটি কথায়ই ধরে ফেললাম। নাস্তিক কাকে বলে? আর দাড়িওয়ালা অপরাধ করতে পারে শাস্তি পেতে পারে না?
মোটামুটি তিনি আমাকে একটি দামি রেষ্টুরেন্টে বসিয়ে পাক্কা একঘন্টা বোঝাতে লাগলেন। কিন্তু আমার তো বুঝে আসে না। নাস্তিকতার ব্যাপারটা তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। কথা বলছেন, ঐ রাজাকারদের দাড়ি, টুপি বা মুসল্লি ভাবকে। আমার কথা হলো, কার্টুন বানানো ঠিক না। সেটা মানলাম। কিন্তু আপনার তো কথা সেটা না। ইসলামিক কালচারটা আপনার সমস্যা। তিনি হ্যা বললেন। কিন্তু আমার মন ভরেনি। অপরাধি সব সমান। দাড়ি, টুপিওলাদের শাস্তি বেশি হওয়া উচিত। ইসলামের সুমহান আদর্শকে যে ব্যক্তি জলাঞ্জলী দিয়েছে তাকে আগুনে পুড়িয়ে মারা উচিত। আমি মনে মনে বললাম।
আজ নিজেকে কী বলে ধিক্কার দিব, ভাষা খোঁজে পাচ্ছি না। মুফতি ওয়াক্কাস, রায়পুরী, ওলিউল্লাহ আরমান ভাইদের নিয়ে তাদেরই দলের এক পক্ষ ট্রল বানাচ্ছে। বিশ্বচোর বলে গালাগালি দিচ্ছে। দুইজন কওমী মাদরাসার বহু আকাঙ্খিত কিতাব বুখারী শরীফের দীর্ঘদিনের শায়খ। একজন নবাগত। কওমী মাদরাসা আসলেই আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয়!
Our facebook page Bangla Series

Comments