হযরত আনাস
রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. ইরশাদ করেছেন, তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকবে সে ঈমানের স্বাদ পাবে। (১) যার কাছে আল্লাহ
ও রাসুল সা. অন্যসব কিছু থেকে প্রিয়। (২) যে একমাত্র আল্লাহরই জন্যে কোনো
ব্যক্তিকে ভালবাসে। (৩) যে আল্লাহ তায়ালা কুফর থেকে মুক্তি দেওয়ার পর সে কুফরে
ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতোই অপছন্দ করে।
*কুফর থেকে মুক্তি দেওয়া-
কুফর থেকে মুক্তি, কথাটা ব্যাপক। অর্থাৎ (১) আল্লাহ পাক
তাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন এভাবে যে, সে ইসলামের উপর
জন্মগ্রহণ করেছে এবং তার উপর বহাল রয়েছে।
(২) কুফর থেকে ইসলামে প্রবিষ্ট হওয়া তথা ইসলাম
গ্রহণ করা।
*ঈমান এবং কুফর-
ঈমানের আভিধানিক অর্থ: সত্যায়ন করা, দৃঢ় করা।
আর পরিভাষায়- রাসুল সা. যা নিয়ে আগমন করেছেন সেগুলো সহকারে তাকে
সত্যায়ন করা।
কুফরের আভিধানিক অর্থ: গোপন করা ও ঢেকে ফেলা, অস্বিকার
করা, অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
আর পরিভাষায়- নবী করিম সা. এর আনীত আদর্শের বিরোধিতা করাকে কুফর বলে।
এটা ঈমানের বিপরীত।
*ঈমানের স্বাদ-
ঈমানের স্বাদ বা মিষ্টতা বলতে মনীষীদের মতামত।
= শায়খ মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবীর মতে, ঈমানের স্বাদ বলতে ইবাদতে আগ্রহবোধ করা, তৃপ্তি
অনুভূত হওয়া, দ্বীনের পথে দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার মানসিকতা
সৃষ্টি হওয়া এবং জাগতিক বিষয়ের উপর দ্বীনকে সর্বদা প্রাধান্য দান করার মনোবৃত্তি
গড়ে ওঠা।
= কাযী বায়যাবী রহ. এর মতে শরীয়তের অনুশাসন ও
বিধি-বিধান পালন করা স্বভাবগত কষ্টকর মনে হলেও তার উপকারিতা ও প্রতিদানের
প্রত্যাশায় তা যথাযত পালনে আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ার নামই হল ঈমানের স্বাদ।
*মুহব্বতের সবব বা কারন-
মনীষীগণ এ ব্যাপারে একমত যে, মহব্বত ও ভালবাসার সবব
চারটি। সাধারণত যে সকল কারনে কোনো বস্তুর প্রতি মানুষের মন আকৃষ্ট হয় ও তার প্রতি
অনুরাগ তৈরি হয়।
১। জামাল অর্থাৎ বাহ্যিক রূপ-সৌন্দর্য। যেমন লায়লা-মজনুর ভালবাসা।
হযরত ইউসুফ আ. ও জুলাইখার প্রেম উপখ্যান। এ কাহিনীগুলো একথা প্রমাণ করে যে, মানুষ
অনেক সময় বাহ্যিক রূপ-সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে।
২। কামাল অর্থাৎ উত্তম গুণাবলী। হযরত বিলাল রাযি. কৃষ্ণবর্ণ হওয়া
সত্ত্বেও তার উত্তম গুণাবলীর কারনে তিনি সবার কাছে সমাদৃত ছিলেন। একদিন হযরত উমর
রাযি. বললেন, হযরত আবু বকর রাযি. আমাদের সর্দার তিনি আমাদের
সর্দার বিলাল রাযি.কে আজাদ করেছেন।
৩। আল-কারাবাত অর্থাৎ নিকট আত্মীয়তার সম্পর্ক। যেমন সন্তানের প্রতি
পিতা-মাতার সম্পর্ক।
৪। আল-ইহসান অর্থাৎ অনুগ্রহ। কারো অনুগ্রহ ও দয়ামায়া অনেক সময় তার
প্রতি মহব্বতের কারন হয়। প্রবাদ আছে, মানুষ ইহসানের দাস।
উল্লেখিত চারপ্রকারসহ মহব্বতের আরো যত ধরণের সবব হতে পারে সবগুলি
আল্লাহ ও তার রাসুলের মধ্যে পরিপূর্ণরূপে বিদ্যমান রয়েছে।
১। জামাল অর্থাৎ বাহ্যিক রূপ-সৌন্দর্য। এটা আল্লাহ তায়ালার মাঝে
সম্পূর্ণরূপে পাওয়া যায়। যেমন আল্লাহর বানি, আল্লাহ তায়ালা সুন্দর তিনি
সুন্দরকে ভালবাসেন।
আর রাসুল সা. এর সৌন্দর্য সম্বন্ধে হযরত জাবের রাযি. বলেন একদিন
পূর্ণিমার রজনীতে আমি রাসুল সা.কে দেখতে লাগলাম আবার চাঁদের দিকে তাকাতে লাগলাম।
শেষে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম যে, আল্লাহর রাসুল সা.
পূর্ণিমার চাঁদ থেকেও বেশি আলোকিত ও সুন্দর। -শামায়েলে তিরমিযি
২। কামাল অর্থাৎ উত্তম গুণাবলী। আল্লাহ ও তার রাসুলের কামালাত তথা
উত্তম গুণাবলী পরিপূর্ণরূপে বর্ণনা করা সম্ভব না।
পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় কামাল হলো, ইলম। আর এ সম্পর্কে রাসুল
সা. বলেন, আমাকে জগতের সমস্ত ইলম দেয়া হয়েছে।
৩। আল-কারাবাত অর্থাৎ নিকট আত্মীয়তার সম্পর্ক। নবী করীম সা. এদিক
থেকেও সবার উপরে রয়েছেন। যেমন আল্লাহর বানী- নবী সা. মুমিনদের প্রাণের চেয়েও বেশি
তাদের নিকটতম।
৪। আল-ইহসান অর্থাৎ অনুগ্রহ। মানবজাতিসহ সমস্ত মাখলুক সর্বদা আল্লাহ
পাকের অনুগ্রহের মুখাপেক্ষী। তেমনি ইহকালে ও পরকালে আমাদের প্রতি রাসুল সা. এর
অসংখ্য অগণিত ইহসান রয়েছে। যা কখনো গণনা করে শেষ করা যাবে না।
Like our facebook page Panther Series
Comments
Post a Comment