শাহজালাল
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাষ্টারের ছাত্র ছিলেন আমার এক শ্রদ্ধেয় স্যার। এখন বিসিএসের
পরীক্ষার্থী। তাঁর সাথে অনেক দিন পর দেখা হলো।
তিনি আমাকে
অনেকদিন আগে বলেছিলেন, ইয়াহইয়া, তুমি
আমাকে কিছু ইসলাম শেখাও। আমার তো নামায, রোজা এসব ভালো
মতো হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।
আমি তখন তাঁকে
বলেছিলাম,
স্যার আপনি তাবলীগে ৩ দিনের জন্য চলে যান। প্র্যাক্টিক্যালি
জানতে পারবেন। অন্তত যেগুলো দরকার।
তাঁর ভাবেসাবে
তখন কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম, তাবলিগ নিয়ে তাঁর
কিছুটা এলার্জি আছে। আমি আর বেশকিছু বলার সময় পাইনি বা বলতে উৎসাহ ছিল না।
সেদিন ফোন করলেন
তার নতুন বাসায় যাওয়ার জন্য। বাসায় গেলাম। অনেক কথা-বার্তা হলো। কথা প্রসঙ্গে আমি
জানালাম,
আমি একটি ইউটিউব চ্যানেল করতে চাই। কিন্তু মোটামুটি মানের টেনশনে
পড়েছি, কী বিষয়ে স্টার্ট করব?
তিনি আমাকে
প্রায় জোর করে বললেন, তুমি ইসলামিক বিষয়ে চ্যানেল করো। আমি
তোমার সাথে আছি। চেষ্টা করব আমার সাধ্য থেকে বেশি তোমাকে হেল্প করার। আমি হেসে
বললাম, স্যার, আর কোনো বিষয়
পেলেন না? আমার হাল-হকিকত দেখেও কি বুঝতে পারেন না?
আমার দ্বারা এসব হবে কিনা বা আমার এসব করার যোগ্যতা আছে কিনা।
তিনি বললেন
তোমার যথেষ্ট যোগ্যতা আছে। অন্তত বোঝানোর ক্ষমতা আছে। আমি তো ভেতরে ভেতরে (বুঝতেই
তো পারছেন).....।
সেদিনও কথা
প্রসঙ্গে তাবলীগের যাওয়ার কথা বললাম। তিনি হেসে আমাকে বললেন আমি আসলে একটি
দ্বিধাদ্বন্দে পড়েছি। না তাবলীগ করতে পারছি না সেটা (একটি ইসলামি দলের নাম বললেন)
করতে পারছি। তাবলীগ করতে পারছি না ওরা আমাকে তাবলীগ সমন্ধে কিছু কথা বলেছে সেই
জন্য। আর তাদের দল করতে পারছি না তাদের কিছু আভ্যন্তরিন কার্যকলাপ আমি দেখেছি এবং
ঐ দল আমি করবও না।
আমি বললাম স্যার
তাবলীগ সমন্ধে দু’একটি কথা বলুন যেগুলো আপনাকে তাবলীগে
যেতে বাঁধা দিচ্ছে।
বললেন, শুনেছি ইসলামের পাঁচ স্তম্ব আর ওদের ছয়। আর...
আমি বললাম, সব কথা শুনার পর আমি কি এই সমন্ধে বলব নাকি প্রতিটি কথার পর কিছু কথা
বলব? তিনি বললেন, বলো।
আমি সুযোগে পেয়ে
গলা খাঁকাড়ি দিয়ে বললাম, ইসলামের পাঁচ স্তম্ব আর ওদের ছয়টা কী?
তিনি আমতা আমতা
করে বললেন, ওই ওই যে কী যেন স্তম্ব নাকি বলে?
আমি বললাম, স্যার তাবলীগ যারা করে তারা কখনো স্তম্ব বলে না। ওরা বলে, ‘ছয়টি জিনিষের ওপর আমল করলে দ্বীনের ওপর চলা অতি সহজ’ এতটুকুই। আমি কী আর কথা গুলো ব্যাখ্যা করব, নাকি
বুঝতে পারছেন এটা স্তম্ব বা এই জাতীয় কিছু না।
তিনি কিছু সময়
ঝিম মেরে বসে কী যেন ভাবলেন। তারপর বললেন, আচ্ছা তাবলীগে যে বই
পড়ানো হয় সেটা নাকি ভুল।
আমার প্রবল হাসি
পেল। আমি এই কথা আরো শুনেছি। বললাম, প্রথমত এই কিতাবগুলো
ছাড়া কি অন্য কিতাব পড়তে তাবলীগের কেউ নিষেধ করেছে। এরকম কোনো কথা শুনেছেন?
আসলে তাবলীগের তো প্রধান উদ্দেশ্য হলো যারা দ্বীন ধর্ম সম্বন্ধে
অজ্ঞ তাদেরকে দ্বীনের কিছু বেসিক জ্ঞান দান করা। সেই সাথে অনুপ্রেরণামূলক কথা।
তাবলীগ প্র্যাক্টিক্যালী কাজের ক্ষেত্র। মাওলানা হওয়ার জায়গা তাবলীগ না।
আপনি যদি কুরআন
বুঝতে চান, হাদিস বুঝতে চান আপনার তো আরবী ভাষায় প্রবল দখল
থাকতে হবে। আমি নিজেও কত আরবী বই পড়লাম তারপরও যখন কোন হাদিসের কিতাবের একটি
শব্দের ব্যাখ্যা পড়ি লাগে সমুদ্রে পাড়া দিলাম।
ক্বওমী মাদরাসায়
ছাত্ররা দীর্ঘ ৮-১০ বছর লাগাতার আরবী ভাষার ক্লাস করে। তারপর কুরআন শরীফের
ব্যাখ্যায় হাত দেয় হাদিসের ক্লাস তো আরো পরে। আর আপনি.....।
স্যার যে কারনেই
হোক আমার কথা খুব মনোযোগ দিয়েই শুনছেন বলে মনে হল। তার এই অবস্থা দেখে আমার উৎসাহ
প্রবলবেগে বেড়ে গেল। আপনি বলেন তো আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের কে সবচেয়ে বেশি
বিজ্ঞানচর্চা করে? নিশ্চয় জাফর ইকবাল স্যার। তিনি মাথা
নাড়লেন।
তিনি বাচ্ছাদের
জন্য অনুপ্রেরণামূলক বিজ্ঞান বিষয়ক অনেক বই লিখেছেন এবং লিখছেন। এখন যদি আমি বা
যারা বিজ্ঞান সমন্ধে টুকটাক পড়েছে তারা বলে বসলাম, জাফর ইকবাল
এসব কী ছাইপাশ লিখছেন? বিজ্ঞানের “ব”ও নেই। কথাটা কিরকম কিরকম হয়ে যাবে না?
তিনি বললেন, হ। কথাটা তো সত্যি।
আমার আজ কি যেন
হয়েছে। হাত নেড়ে নেড়ে তালিম দিচ্ছি। বললাম, তাবলীগের পাঠ্যসূচিতে
যে কিতাবগুলো অন্তর্ভূক্ত সেইগুলো এমন এক ব্যক্তি সাজিয়েছেন। যিনি তাঁর সারাজীবন
হাদীসের কিতাব-ই পড়িয়েছন। বুখারী শরীফ, মুসলিম শরিফ সহ সব
হাদিসের কিতাব তার ব্রেইনে গাঁথা ছিল। তার উপাধি ছিল শায়খুল হাদীস।
আমি বুঝতে
পারলাম,
দু’টা কারনে স্যার আমার সাথে তর্কে
লিপ্ত হচ্ছেন না। এক. স্যার একটি নির্ভরযোগ্য পথ খোঁজছেন। দুই. তিনি কোনো নিদিষ্ট
মাইন্ডেড গোত্রের না।
আমি বললাম, আপনি যদি একেবারে ভালোমতো কুরআন-হাদিস পড়তে চান। তাহলে ঢাকায় শুনেছি
একটি মাদরাসা আছে যেখানে কলেজ-ভার্সিটির ছাত্রদের সুন্দর ব্যবস্থা আছে। আপনি
সেখানে ভর্তি হয়ে যান। সাত-আট বছর লাগবে। আপনি মাওলানা হয়ে গেলেন প্লাস কুরআন
হাদিস মোটামুটি বুঝতে পারলেন।
আর যদি বলেন, আমি যে বিষয়ে আছি সে বিষয়েই থাকি এবং দ্বীনের পথে চলি। তাহলে বলব,
তাবলীগে চলে যান।
স্যার মাথা
নাড়লেন,
না। আমি এখন সাত-আট বছর সময় লাগাতে পারব না। দেখি সময় করে একবার
চলে যাব তাবলীগে। আর তুমিও আমাকে অল্প অল্প করে শেখাবে (আবার আমার উপর)।
স্যারের সাথে
উদাহরণসহ আরো অনেক কথা বললাম। সম্পূর্ণ অভিব্যক্তিটা ফুটিয়ে তুলতে পারছি না। মাথায়
প্রায় গাঁথা আছে। লেখার বেলায় কিছু কিছু আসছে।
স্যারের সাথে
দেখা করে আসার পর আমার মাথা আউলে যায়। ঘুরেফিরে একটি কথা ভাবতে থাকি। যেটা আমি মনে
করি ফাউল ভাবনা।
আমি স্যারের
সাথে যে কথাগুলো বললাম, এখন কি এসব বুঝানোর সময়। আর কি কোনো
কাজ কাম আমাদের নেই? আমরা আমাদের গন্ডির ভেতর চেপে থেকে
নিজেকে নিজে সাধুবাদ দেই। নিজের চিন্তাকে বলি খাঁটি ইসলামিক আদর্শ। নিজেদের একটি
কেন্দ্রকে উম্মাহর কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করি।
আমি প্রায় সময়
ইউটিউবে থাকি বা বিভিন্ন ম্যাগাজিন পড়ি। যার কারনে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির প্রতি
বেশকিছুটা আগ্রহ আছে। সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ তো অনেক আগের। মোটামুটি বলা যায়, কিছু বইপত্র পড়েছি বা পড়ছি। কোনো ক্ষেত্রে আমি কুরআন বা হাদিসের উল্টো
কিছু পাইনি। দেখেছি, এসব বই-পুস্তক বা অন্যান্য হাবিজাবী
জিনিষ আমাকে কুরআন এবং হাদীস বুঝতে সহায়তা করছে।
পৃথিবীর কোনো
ধর্ম বাস্তবতা ভিত্তিক না একমাত্র ইসলাম ছাড়া। আমাদের ধর্ম বলা যায় জ্ঞানের ধর্ম।
কুরআন হাদীস পড়লে এর ভুরিভুরি প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা প্রায়োগিক ক্ষেত্রে
এই কথাটা বুঝাই, ইসলাম শিক্ষাকে সাপোর্ট করে না।
আমরা আছি
নিজেদের মধ্যে গন্ডগোল বাঁধাতে। আমাদের মতাদর্শের বিপক্ষে যারা থাকে তাদেরকে
কিভাবে হেনস্থা করতে হয় সে চিন্তা পুরো মাথাটা কুরে কুরে খায়। আমার চিন্তা একমাত্র
সঠিক চিন্তা। খাঁটি ইসলামিক চিন্তা।
Our Facebook Page Panther TV
Comments
Post a Comment