ফাউল ভাবনা-০২

দাওরায়ে হাদীসে পরীক্ষা দেব বলে ভর্তি হয়েছি। ১ম সাময়িক পরীক্ষাও দিয়েছি। ক্লাস করতে পারিনি বা ক্লাস করার প্রতি ইন্টারেস্ট ছিল না। বইপত্র খুলে দেখিনি। ওয়াজ নসীহত বা আলিম-উলামার মুখে শুনেছি, এই ক্লাস হাদিসুন নবীর। এখানে শুধু হাদীস অধ্যায়ন হয়। অন্যান্য বিষয় এখানে নেই।
পাক্কা নিয়্যত করেছিলাম পরীক্ষার মাস খানেক বা দিন পনের আগ থেকে মাথায় পট্টি বেঁধে পড়াশুনা শুরু করব। পারিবারিক অযাচিত একটি কান্ডে জড়িয়ে পড়ে আমার মাথায় আস্ত বাঁশের বাড়ি পড়েছে। পরীক্ষার একদিন আগেও পড়তে পারিনি। আল্লাহ উপর ভরসা এবং পরীক্ষা দিতে হবে এই মনোভাব নিয়ে পরীক্ষার হলে ঢুকি।
আটদিন পরীক্ষা ছিল। আমি ইচ্ছাকৃতভাবে মাথায় টেনস নেইনি। আমি কখনো পড়াশুনায় খারাপ ছাত্র ছিলাম আবার কখনো কিছু ভালো নম্বরদারীও ছিলাম। পূর্বের এক্সপেরিয়েন্স থাকায় বেশি একটা চিন্তা বা দুশ্চিন্তা আসেনি।
প্রতিদিন পরীক্ষার হলে প্রশ্ন হাতে নিয়ে কিংবা আগের রাত্রে দুই-চারটা প্রশ্নের আনসার পড়ে আমি ডেঞ্জারাস ভাবুক হয়ে পড়ি। ফাউল ভাবনা গ্রাস করে ফেলে।
প্রথম যে ভাবনা আমাকে তাড়িত করে সেটা হল, আমি তো জানি এই ক্লাসে সম্পূর্ণ হাদিস পড়ানো হয়। তাহলে ফিক্বহের এত গুরুত্ব কেন? ফিক্বহের তো কত কিতাব মাদরাসায় পড়ানো হয় আমি নিজেই তো কয়েকটি পড়েছি। ফিজিক্স পড়তে পড়তে দুচারটা কেমিস্ট্রি পাঠও পড়ানো হয়ে যায় তাই বলে আগাগোড়া তো আর কেমিস্ট্রি না। যদি হাদিসের কিতাব পড়তে ফিক্বহের কিতাব মুতালাআ করতে হয় তাহলে কুদুরী বা চারখন্ড চারক্লাসে ফিক্সড করা আল-হিদায়া পড়ার গুরুত্ব কমে যায়। মুফতি আর মুহাদ্দিস ওয়ান ম্যান হলেই হয়। একটি জিনিষ হঠাৎ মাথায় আসে, অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্কর। আর কি আশ্চর্য এই ভাবনাটা আমার মাথা থেকে উধাও হয়ে যায়।
আমি আগাগোড়া ইসলামিক কালচারে বড় হয়েছি বা হচ্ছি। আমার বাড়ি বলেন বা নানা বাড়ি বলেন সবখানে ইসলামিক মাইন্ডেড মানুষের প্রভাব। শক্তিশালী প্রভাব। সম্পূর্ণ ইসলামিক কালচার। এই কথাটা বলার কারণ হল, ইসলামিক পরিবেশ বা ইসলামিক কালচার আমার অঙ্গে প্রতঙ্গে জড়িত না হোক আমার আশেপাশের মানুষের আছে।

কথা হল, আমার পরিবেশে হাদিসের কতটুকু প্রাধান্য আছে। এখানে প্রশ্ন আসবে, একটু আগে আমি নিজেই বললাম, ইসলামিক কালচার আবার বলি হাদিসের প্রাধান্য নেই। এটা দ্বিমুখি চরিত্রের প্রতিফলন হয়ে গেল না? আসলে সেটা না। কুরআন-হাদিস এমন এক জ্ঞানের শহর যেখানে শুধু প্রবেশ করা যায়। কিছু মুস্তাহাব টাইপের আমল করলে যদি ইসলামিক পার্সন হিসেবে নিজেকে মনে হয় তাহলে থাক হাদীস পড়া লাগবে না। বছরে দুবছরে তাবলীগে দুচার চিল্লা দিয়ে দিলেও হবে। 

Our Facebook Page Panther TV

Comments