অজানা ঠিকানায় চিঠি

আব্বা, এবারের ঈদটা খুবই সাদামাটা হল। প্রতি ঈদে কিছু না কিছু কিনি। এবার কিছুই কিনলাম না। টাকার অভাবে না। মন সায় দেয় নি। দুঃখ, ভারাক্রান্ত মনে কি খুশি করা যায়। গত ঈদে তুমি আমাদের মাঝে ছিলে। ঈদের নামাজ পড়ে প্রথমে তোমার সাথে কোলাকুলি করি। এবার কারো সাথে কোলাকুলি করি নি। তোমার ব্যক্তিত্বপূর্ণ দেহটা আমার সামনে চলে আসে। বুক ভার হয়ে আসে। অজান্তে চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ে। এবারের ঈদটা আমার কান্না দিয়ে শুরু হল।

ঈদের দিন শায়খুল হাদীস মুহাম্মদপুরী হুজুর মারা গেলেন। পরদিন রাণাপিং মাদরাসায় জানাযা হল। আমি খবর শুনি নি। আমি বাড়ি যাবার জন্য বের হই। শায়েখ ফারুক সাহেব আমাকে প্রায় জোর করে জানাযায় শরিক করালেন। রাণাপিং মাদরাসার প্রাণ-চাঞ্চল্য দেখে আমার মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। মাদরাসার প্রতিটি খোলা দরজা-জানালায় একটা আলাদা রকমের আনন্দ ঠিকরে বেরুচ্ছে। যে আনন্দের মাঝে তোমার ভাব-গাম্ভির্যপূর্ণ ছবি মুচকি হাসছে। আমি সম্পূর্ণ হাল-হকিকত দেখে একটি ছবি আমার চোখের সামনে ভেসে ভেড়ায়। আমি তখন নয়াসড়ক মাদরাসায় মিশকাত জামাতে পড়ছি। আপনি রাণাপিং মাদরাসাকে সঙ্গীন অবস্থা থেকে টেনে তুলছেন। একদল ফিতনাবাজ মাদরাসার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পোষ্টারিং করে। পরোক্ষভাবে আপনাকেও কটাক্ষ করে। আমার শ্রদ্ধেয় একজন শিক্ষক ইশারা ইঙ্গিতে আপানার অপরিণামদর্শী কার্যকলাপ সম্বন্ধে কটুক্তি করলেন। আমি খুব কষ্ট পাই। মনে মনে আপনার প্রতি অসন্তুষ্ট হই, রাণাপিং মাদরাসার দায়িত্ব নেয়ার কারনে। আজ পৃথিবীর সবচেয়ে সুখ পেলাম। আপনার ওসীলায় সিলেটের প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী মাদরাসা তার হারনো রূপ, লাবন্য ফিরে পাচ্ছে। একজন অশীতিপর আলিমের জানাযা উপলক্ষে হাজার হাজার আলিম-উলামা একত্রিত হলেন।

Comments