এক সময় মাইকিং
করার খুব সখ ছিল। বয়স অল্প ছিল এবং সুন্দরমত দিতে পারতাম না বিধায় যোগ্যদের চোখে
বিশেষ বিবেচ্য কখনো হই নি। তবুও চেষ্টার কমতি কখনো ছিল না। ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়িতে
বসে থাকি। যদি একবার মাইকিং করতে থাকা ‘মহান যোগ্য’ ভাইজানের করুণা হয়। করুণা হয় না। তখন দিল খুলে ‘তোমার দিল কি দয়া হয় না’ গানটা গাইতে ইচ্ছা
করে। তবে গাইতে পারি না। কারণ ‘মেছাব’। মেছাবদের অনেক কিছু করতে মানা।
সকালে বাসা থেকে
ঘুম ঘুম চোখে বের হই। উদ্দেশ্য বিশেষ কিছু না। প্রতিদিন প্রায় এই সময় ঘুম থেকে
জেগে হাঁটার প্রবণতা বেশ কিছুদিনের। দিনটি আবার শুক্রবার। একটি কারণের সাথে আরেকটি
কারণ যোগ হল, আজ পত্রিকা পড়া দিবস। পত্রিকা কিনা হবে সঙ্গে
হন্টনও হয়ে যাবে।
আম্বরখানা মোড়ে
পত্রিকা কিনে এখনো ভাঁজ করে হাঁটা শুরু করি নি। সি.এন.জি থেকে এক বড় ভাই নামলেন।
একটি ইসলামী রাজনৈতিক দলের ছাত্রনেতা। অবশ্য দলের অনেকে তাকে নিজেদের দলের বলে
স্বীকার করে না। তবে তিনি আছেন। থাকবেন। তার ক্ষয় নেই। কেউ মানল কি মানল না। তার
কিছু যায় আসে না। এই মহান দলে আরো অনেক আছেন যারা স্ব-ঘোষিত লিডার। আবার অনেকেই
জানেই না তারা যে এই দলের লিডার হয়ে বসে আছে।
তিনি হন্তদন্ত
হয়ে গাড়ি থেকে নেমে আমাকে একপ্রকার জোর করেই গাড়িতে তুললেন। আমি কিছু বুঝে উঠার
আগেই খুব ভালো করে বুঝতে পারলাম সি.এন.জি অটোরিকশায় বসে আছি। আমার পরম শ্রদ্ধেয় বড়
ভাইটি ঠোঁট দু’খানা দু’দিকে প্রসারিত করে
বড়ই আনন্দিত হবার ভাব করলেন। আমি মুচকি হেসে তার এই হটকারিতাকে প্রশ্রয় দিলাম। কারণ
আর কিছু না। আমার ফোর জি স্পিডের মাইন্ড বুঝে ফেলল, মাইকিং
করার আজ ঢের সুযোগ। এরকম সুযোগ ইহজীবনে আর আসবে কিনা সন্দেহ।
মাইকিং চলতে
থাকল। সঙ্গে আমিও আছি। অপেক্ষা করতে থাকি কখন মাইকটা আমার হাতে আসবে। শাহবাগে বসে
বিরিয়ানীর সঙ্গে দু’ছিলিম....... মেরে যুদ্ধপরাধীর সাথে
মহানবীসহ মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহপাককে অপমান করতে থাকা “শাহবাগীদের”
বিরুদ্ধে গরম গরম স্লোগান দিতে থাকব। কিন্তু আসে না। হঠাৎ অল্প
কিছু মূহুর্তের জন্য এল। আমি আমার পেটের ভিতর জমানো সব আবেগ মাইক দিয়ে বের করতে
থাকলাম।
এই অল্পকিছু
সময়কে আমি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ মূহুর্ত মনে করলাম। সারা সপ্তাহের পরিধানকৃত
পাঞ্জাবী,
অপরিষ্কার লুঙ্গি এবং দু’তিন ধরে গোসলের
কথা একবারও মনে এল না। তবে জীবনে এই শেষ!
আর কখনো মাইকিং
করার আগ্রহ মনে আসে নি। আসবে বলে মনে হয় না। বিভীষিকাময় কোন ঘটনায় মানুষের সখ
আহ্লাদকে এভাবে সমূলে নষ্ট করে ফেলে আগে জানা ছিল না।
Comments
Post a Comment