সারপ্রাইজ (একটি প্রেমের গল্প)


পেত্নির ভূত (ছদ্মনাম)
মনটা বড়ই অস্থির। কিছুই ভাল্লাগছে না। সকালে শুধু চা খেয়েছি। আর কিছু খাই নি। এখন দুপুর বারোটা বাজে। কিছু খেতে মন চাচ্ছে না। আমার ডিপ্রেশনের সমস্যা আছে। মাঝেমধ্যে এরকম হয়। দুনিয়ার বিশালতা আমার কাছে শূন্যতা লাগে। বেচে থাকার কোনো সার্থকতা চোখে পড়ে না।
ল্যাপটপ অন করি। সিনেমা দেখব। বাংলা সিনেমা আমার চোখে সহ্য হয় না। তামিল বা হিন্দি কোনো ফিল্ম দেখব।
মোটামুটি পাঁচ থেকে ছয় মিনিট দেখি। মনটা সেই অস্থির হয়েই আছে। কাহিনীতে মনোযোগ আসে না।
শাটডাউন না করেই ল্যাপটপের ডালা লাগিয়ে রাখি। গায়ে শার্ট ঝুলিয়ে বের হই। ছাদে রোদের মধ্যে বসে বসে আকাশ দেখব। বাসার মেইন দরজা ভেতর থেকে লক করে সিড়ি ভাঙ্গতে থাকি। কোত্থেকে যেন এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস বয়ে যায়। আমার সারা শরীর শিরশির করে ওঠে। আমি যখনি ছাদে ওঠার প্রস্তুতি নিই তখনি এরকম একটা বাতাসের স্রোত অনুভব করি।
ছাদের দরজাটা উন্মুক্ত করতে যাব তখনি একটা মেয়েলি ছায়া দেখি। কোনদিক থেকে যে কোনদিকে গেল বুঝতে পারি নি। হয়তো কল্পনা ছিল। ছাদের বউন্ডারী ঘেঁষে দক্ষিণ দিকে একটা চেয়ার রাখা। আমি ধড়াস করে চেয়ারে বসি। আবারো মেয়েলী ছায়াটা লক্ষ করলাম।
ছায়া না, প্রকৃত মানবী। আমার বাড়িওলার একমাত্র মেয়ে। কলেজে পড়ে। স্কুল শেষ করে কলেজে ওঠার পর সবারই এক ধরণের ভাব কাজ করে। সেও এখন সেই ভাব নিয়ে মজে আছে।
আমি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াই। বাউন্ডারীর দেয়াল ধরে বাইরের গাছপালা দেখতে থাকি। আজ কারো সাথে ইয়ার্কি-তামাশা করব না। আমার মন মারাত্মক খারাপ।
হঠাৎ মাথায় কিসের যেন ঠোকর লাগে। চুল ভেদ করে মাথার পাতলা ত্বকে চিন করে ওঠে। পেছন ফিরে তাকাই।
সে মুখে প্লাষ্টার লাগিয়ে খিলখিল করে হাসছে। হাতে বড়ইর দুতিনটা বিচি। আমি কি করব বুঝতে পারছি না। বড়ই রহস্যময়ী এই মেয়েটা।
আমি আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকি। সেও তার অবস্থানে অনড়। কত সময় এভাবে ছিলাম জানি না। তার পা নড়ে ওঠে। আলতো করে হেঁটে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। আমার হৃদপিন্ড কয়েকগুণ লাফাচ্ছে।
কী, মন খারাপ? সে মুখে ঢাকনা রেখেই বলল।
না।
তাহলে মুখটা পাঁচ বানিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
এম্নিই।
আজ আমার সাথে ছাগলামী করছেন না কেন?
ভাল্লাগছে না।
তাহলে আর কি, চলে যাই। সে চলে যাবার জন্যে উদ্যত হয়।
আমার মনে হল, আমার বডিটা পিরামিডে ঢুকিয়ে কেউ আমার হার্ট, কিডনি, লিভার নিয়ে চলে যাচ্ছে।
সে ফিরে দাড়ায়। আমি তার চোখের দিকে তাকাই। তার চোখ ছাড়া চেহারার আর কিছু আমি কখনো দেখি নি। তার চোখের তারা নেচে ওঠে।
কি হাবলু মিয়া, কী হল? আজ বড় আপসেট কেন? আমি তো ভেবেছিলাম, আপনি আমার পেছন পেছন চলে আসবেন। সে তার স্বভাবগত রিনিঝিনি গলায় বলে।
আমি কিছু বলি না। চোখের তারার নাচন দেখছি। তার চোখের তারাকে সবসময় আমার বড় আপন মনে হয়।
আজ আপনার মন খারাপ এটা মেনে নেয়া যায় না। আজ কি দিবস সেটা মনে আছে?
আমি মুখ ভোঁতা করে বললাম, প্রতিদিন একটা না একটা দিবস পড়ে। কোন দিবস মনে রাখব?
সে হালকা হেসে বলল, আজকের দিবসটা মনে রাখার মতো। আজ তো ভালবাসা দিবস।
আমার মনটা হালকা নেচে আবার থেমে যায়। বললাম, যাদের ভালবাসা আছে তাদের দিবসও আছে। আমার তো সেই সৌভাগ্য নেই।
সে ফিক করে হেসে ফেলে। ট্রাই করে দেখেছেন?
ট্রাই করে কী হবে? যাদের মনে অন্য মানুষ গেঁথে আছে, তাদের মনে তো আর আশ্রয় পাওয়া যাবে না।
কবি হয়ে যাচ্ছেন দেখছি। কিছু সময় থেমে সে বলল, আপনি এতো বোকা কেন?
বোকা হলেও কি আর না হলেও বা কি?
জানেন, আজ বড় ইচ্ছা ছিল, কারো কাছ থেকে ফুল পাব। পেলাম না। মুখ গোমড়া করে বসে থাকলে কি ফুল দেয়া যায়।
কেন, ঐ শা….. সরি ঐ ঐ …… ফুল দেয় নি। হঠাৎ আমার মুখে রাজ্যের জড়তা কোত্থেকে যেন এসে ভর করল। আমার সারা শরীর উত্তেজনায় কাঁপছে। মাথা ঝিম হয়ে আছে।
সে মাথা নিচু করে ফেলে। ডান পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে জুতো ঘষছে। নিম্নস্বরে সেই মুগ্ধ করা সুরে বলল, সারা ঝামেলা তো আপনি বাঁধালেন। সারাক্ষণ আমার পেছনে লেগে থাকেন। তার সাথে একটু সময় কথা বলব, সেই সুযোগটুকু আপনি দেন না। এই নিয়ে রাগারাগি, মনোমালিন্য। ভালই হল, আপদ বিদেয় হয়েছে।
আমার বিশ বছরের জীবনে আজকের মতো এত সুখ কখনো পেয়েছি বলে মনে পড়ে না। উচ্ছসিত হয়ে বললাম, কী বলেছিলাম, এখন বুঝছ? এই সব ছেলেরা এই রকম। সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। মধু পান করে কেটে পড়ে।
তা যা হবার হয়েছে। এখনও কি আমাকে ফুল দেবে না? সে অভিমানি গলায় বলল।
আমি তড়িৎবেগে চারিদিকে খুঁজতে থাকি। কোনো ফুলের টোকরো চোখে পড়ে না। নিচের দিকে তাকালাম। দেখি কী সুন্দর একটা ফুলবাগন। এটা তার বাগান। কয়েক পদের ফুলের গাছ দিয়ে সাজিয়েছে।
আমি তড়িৎবেগে ছাদের বাউন্ডারীর দেয়ালের ওপর উঠি। লাফ মেরে নিচে নামতে যাব, তখনি সে আমাকে ঝাপটে ধরে। গলায় গভীর উদ্বেগ ঢেলে বলল, আপনি এ কি করছেন? তিন তলার ওপর থেকে পড়লে তো মরে যাবেন।
আমি পেছন ফিরে তাকাই। তার মুখ উন্মুক্ত। যে হাত দিয়ে আমার চোখ থেকে তার চেহারা ঢেকে রাখত সে হাত এখন আমাকে গভীর প্রেম দিয়ে ধরে রেখেছে। আমি কোন দুনিয়ায় আছি, বুঝতে পারছি না। মোহাবিষ্ট হয়ে তার চেহারার দিকে তাকিয়ে আছি।
এত তাকিয়ো না। বদনজর পড়বে। সে মুখটা হালকা বাঁকা করে বলল।
আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, তুমি আমাকে একটু চিমটি কাটো তো।

Comments