হুরপরি



আমি তার চেহারার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি। তার চেহারায় কি যেন পরিবর্তন পরিবর্তন লাগছে। ধরতে পারছি না। তার গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা। প্রায় বারাক ওবামার মেয়ের মতো। এতক্ষণে একটা পরিবর্তন ধরতে পারছি। তার চেহারায় কড়া করে পাউডার মারা। এজন্য চেহারায় কিছুটা বিকট-দর্শন ভাব চলে এসেছে। না, মন সায় দিচ্ছে না। আরো কিছু আছে।

বেশকিছু সময় তাকিয়ে থাকার পর ব্যাপারটা ধরতে পারি। তার গালভরা দাড়ি ছিল। এখন নেই। গালের দাড়িটুকু কেটে সাফ করা। যেন সে বাড়ির আঙ্গিনা ঝাঁটা দিয়ে তকতকে করেছে।

আমি কপাল কুঁচকে বললাম, তুহিন, তোমার গালের দাড়িটুকু কেটেছ কেন? ভালই তো লাগত। আর গালে এত পাউডার মেখেছ কেন?

সে নির্বিকার কণ্ঠে বলল, গাল হাতানোর জন্যে। বিড়বিড় করে আরেকটা কথাও বলল, চুমাটুমাও দেবার জন্যেও।

আমি কপাল কুঁচকে বললাম, কী?

সে পূর্বের মতো উদাস গলায় বলল, এসব তুমি বুঝবে না।

=কেন বুঝব না কেন? বুঝাইলে কে না বুঝে।

সে সারা চোখে মুখে বিরক্তির প্রলেপ লাগিয়ে, কপালে চার-পাঁচটা ভাঁজ ফেলে বলল, আমি কয়েকদিন আগে একটা ক্লিনিকে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে জয়েন করেছি। জব করছি। তুমি তো জান!

আমি চোখ বড় বড় করে বললাম, তো কি হয়েছে। চাকরী করছ ভালো কথা। চাকর হয়ে জন্মিলে চাকরী করতে হয়। এটার সাথে দাড়ির সম্পর্কটা কী?

সে আমার কথায় বোধহয় চরম বিরক্ত হয়েছে। গলা চড়িয়ে বলল, আমার অফিসে যেও একবার তারপর বুঝবে।

একদিন আমি সত্যি সত্যি তার অফিসে চলে আসি। সে হাসিমুখে আমকে বসতে বলে। কিন্তু আমি বসব কি? তার দুই পাশের অবস্থা দেখে তো আমি ত্যাবদা মেরে যাই। যেন সে স্বর্গে আছে। হুরপরিরা তাকে মনোরঞ্জন দিচ্ছে। তার গুণকীর্তন গাচ্ছে। আর সে আবেশের চরমে অবস্থান করছে।

অস্ফুটস্বরে আমার মুখ দিয়ে বের হয়, আয় খোদা, এই রকম একটা চাকরী তুমি আমাকে দাও। তোমার দুনিয়ায় আমি আর কিছু চাই না।

Comments