কয়েকদিন আগে একটা ফোন এল। হাফিয মাওলানা ফখরুজ্জামান ফোন করেছেন। বললেন, তার সাথে দেখা করতে। আমি খুব-ই অবাক হলাম। আমার সাথে তার কী দরকার হতে পারে? আসলে বেশি অবাক হয়েছি তার ফোনে। আমি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যাই। আজকাল কারো সাথে দেখা করতে, কথা বলতে মোটেও ভালো লাগে না। তিনি যদি আবার উলামায়ে কেরাম জাতীয় কেউ হন। তাহলে তো কথাই নেই! না গেলেও সমস্যা। তিনি আবার আমাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ও হোন কিনা। অনেক ভেবে-চিন্তে তাঁর দর্শনে হাজির হই।
সেই পুরনো কথা। সেই পুরনো হেদায়েত। পড়ালেখা কেন ছেড়ে দিলাম? মাথা-মুণ্ডের এই হাল কেন? (তিনি বার বার মাথায় তাকাচ্ছেন; যদিও আমার মাথায় একটা ময়লার পুরু আস্তরণঅলা সাদা টুপি ছিল।)
আমি সঙ্গত কারণেই নীরব ভূমিকা পালন করি। কিছু বলার মতো মুডও আমার নেই। কী হবে এসব বলে? উল্টো যেটুকু বিশ্বাস, ভালবাসা এখনো বাকি আছে, তা যে কখন উধাও হয়ে যাবে? অনেক রিস্ক।
তিনি অনেক বললেন। আমি সাইলেন্ট। তিনি খানিক বিরক্তির সাথে বললেন, কথা বল, মুখে কুলুপ এটে বসে আছ কেন?
আমি আনমনে ঠোঁটে হাত ছোঁয়াই। হয়তো মুখের কুলুপ সরালাম। জী, বলেন।
তুমি কি আর পড়বে না?
জী না।
কেন? জানতে পারি?
আমি আবার সাইলেন্ট।
তিনি আমার কথা শুনার বোধহয় প্রয়োজন মনে করছেন না। একটু থেমে বলে চললেন, এক কাজ করো, এখনো সময় আছে। কোনো মাদরাসায় দাওরায়ে হাদিছে ভর্তি হয়ে যাও। মাদরাসার তো অভাব নেই। আলিম নামটা রেখে দাও। নামেই মাওলানা হয়ে গেলে।
জ্বী না। সম্ভব না।
আসলে তোমার ব্যাপারটা আমি জানি। তোমার বুঝা উচিৎ। এরকম বজ্জাত লোক সব জায়গায়-ই থাকে। মাদরাসা এর ব্যতিক্রম হবে কেন? মাদরাসায় অধিকাংশ ছেলে গরীব, নীচু লেভেলের পরিবার থেকে আসে। ওরা মাদরাসায় না আসলে সমাজে কী ভয়ংকর অপরাধ করে বেড়াত। কল্পনা করেছ?
আমি অভিনেতা মোশাররফ করিমের ভাব ধরে বললাম, ভাল-ই তো, গরীব আর নীচু পরিবার থেকে ওরা এসে এরকম ভয়ংকর ভয়ংকর অপরাধ করুক, আর তাদের ছোবলে পড়ে ধনী আর উঁচু পরিবারের ছেলেরা নীচু লেভেলে নেমে যাক। আরেকটা কথা তাঁকে না শুনিয়ে বিড়বিড় করে বললাম, আমরা আমরাই তো!
তিনি গম্ভীর এবং কিছুটা রাগ হয়ে বললেন, তুমি না বেশি বুঝ।
Comments
Post a Comment