আনন্দ ভ্রমণ




শাওন বলল, ছগা ভাই, কী যেন বলছিলে বলে ফেল না!


ছগা ভাই সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে বললেন, হ্যাঁ বলছি, এত তাড়াহুড়া করছিস কেন? সময় অনেক পড়ে আছে। সুমনরাও আসুক। কথাটা সবাইকে বলি। কী বলিস?

শাওন মুখ ভার করে বসে থাকে।

আমরা বসে আছি স্কুল ঘরের বারান্দায়। স্কুলের পেছনটা রাস্তার দিকে দিয়ে সম্মুখটা উন্মুক্ত প্রান্তরের দিকে দেয়া হয়েছে। এজন্য রাস্তায় চলাচলকারী কেউ আমাদের দেখতে পায়না। রমজানের শুরু থেকেই আমরা এখানে প্রতিদিন তারাবিহ’র সময় আড্ডা দেই। লোকেরা মসজিদে থাকে। আমরা নিশ্চিন্ত মনে বাশি টানি। গুরুত্বপূর্ণ অনেক আলাপ আলচনাও করি। সেটা সমাজের কোন উপকারে আসে কিনা জানিনা। তবে এটা জানি, আমদের কোন ফায়দা হয়না।

আজ আমি, ছগা ভাই ও শাওন একটু আগেই চলে আসি। এসেই ছগা ভাই কী যেন বলতে যাবেন, ভূমিকা টানায় থাকতেই মোটা ভারি গলার কয়েকটা গালি শুনা গেল। আমাদের মনে হল, স্কুলের পেছন দিক থেকেই গালির আওয়াজটা আসছে।

আমরা দ্রুত লাফ মেরে উঠি। স্কুলের সামনের দেয়াল টপকে যেই ভাগতে যাব, অমনি চোখ যায় মেইন রোডের দিকে। না আমাদের কেউ গালি দিচ্ছেনা। আবুল মাস্টার তার ছেলেকে শাসাচ্ছেন। বাপ-পুত্র তারাবিহ পড়তে যাচ্ছেন।

আমরা স্বস্থির নিশ্বাস ফেললাম। নিজেদের জায়গায় ফিরে এসে সিগারেট টানায় বেস্ত হয়ে পড়ি।

একটু পরই তারা এসে গেল। তারা মানে রুমেল, সুমন, লাভলু। ছগা ভাই সিগারেটের প্যাকেট, লাইটার তাদের দিকে বাড়িয়ে দিলেন। বললেন, আমরা তোদের জন্যে অপেক্ষা করছি। একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলব।

তারা অবাক হয়ে ছগা ভাইয়ের দিকে তাকায়। শাওন বলল, কী বলবে বল!

ছগা ভাই ঢোক গিলে বললেন, ঈদের আর মাত্র কয়েকটা দিন আছে। ঈদ উপলক্ষে তো কিছু করতে হবে? মানে বিশেষ কোন আয়োজন করা যায় কিনা। আনন্দেরও তো দরকার আছে। তাইনা !

আমি বললাম, আনন্দের অবশ্যই দরকার আছে। কিন্তু বিশেষ আয়োজন যে বললে, সেটা আবার কী?

তোমরা বল না! আমি জাস্ট কথাটা তুললাম। সব বিষয় আশয় যে আমাকেই নির্ধারন করতে হবে। এমন তো কোন কথা নেই।

রুমেল চপলতার সাথে বলল, ফুটবল টুর্নামেন্ট ফেলে দেইনা! কয়েকদিন বেশ আনন্দেই কাটল। গতবার ঈদে মানিকপুরের ছেলেরা ফেলেছিল। তারা কত আনন্দ করল।

ছগা ভাই চোখে মুখে বিরক্তির ভাব ফুটিয়ে বললেন, রাখ তোর ফুটবল টুর্নামেন্ট। এটা একটা আনন্দের ব্যাপার হলো? আর তাছাড়া এবার আমরা ফুটবল টুর্নামেন্ট ফেললে ওরা বলে বেড়াবে আমরা তাদের অনুসরন করছি।

সুমন বলল, তাহলে তুমিই বলে ফেল না!

ছগা ভাই বললেন, সেটা তো জানি। সব আমাকেই করতে হবে। আচ্ছা শুন, আমরা কোথাও বেড়িয়ে আসি। সৌন্দর্য মন্ডিত জায়গা দেখলাম। মনোরম দৃশ্য অবলোকন করলাম। সঙ্গে আনন্দও হলো।

আমরা সমস্বরে বললাম, সেটা তো ভারি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার। কোথায় যেতে চাও?

প্রথমবার হিসেবে চল মাধবকুন্ড যাই। সিলেটের একটা ঐতিহ্য। আমরা সিলেটী। আমাদের চেনা-জানা থাকা তো উচিৎ। কী বল!

আমরা তার কথায় সম্মত হলাম। আসলে ছগা ভাইর প্রতিটি কথাই রাইট। তার কথায় কোন কীল ও কাল নাই।

সুমন বলল, চাঁদা কত করে তুলবে? একটু কম করে হলে ভালো হয়।

ছগা ভাই অবজ্ঞার সুরে বললেন, দেখ তোরা! আমরা আছি কীভাবে মজা করতে পারি। পুরোপুরি ভাবে আনন্দ লাভ করতে পারি। আর সে কিনা টাকার চিন্তায় হালকা হয়ে যাচ্ছে।

আমি বললাম, হ্যাঁ হ্যাঁ, আনন্দ করতে কি টাকা লাগে? এই পবিত্র মজলিসে টাকার কথা এনে তুমি মহা অন্যায় করেছ।

ছগা ভাই থতমত খেয়ে বললন, আরে না না, টাকা তো লাগবেই। তবে আনন্দের জন্যে টাকা কোন ব্যাপারই না। প্রয়োজনে আব্বার পকেট মারবে, আম্মার ভ্যানিটি লুকাবে। আরে কত্ত সিস্টেম আছে।

রুমেল বলল, তা কত করে টাকা তুলবে? একটা হিসেব থাকা ভাল। তাই না!

ছগা ভাই চিন্তিত মুখে বললেন, কত আর তুলবে। বেশি করে তুললে সমস্যা। সবার মাথা খারাপ হয়ে যাবে। আবার কম করে তুললেও অসুবিধা। ভ্রমনটা হবেনা। এককাজ কর, পাঁচশত টাকাই থাক। ছয়জন আছি। তিন হাজার হবে। দুই হাজার মাইক্রো ভাড়া। বাকি খাওয়া-দাওয়া বাবদ। মাইকও তো লাগাতে হবে। গান-টানের ব্যবস্থা করতে হবে না!

শাওন তির্যক ভঙ্গিতে বলল, পাঁচশ আবার টাকা হলো? এক হাজার করে তোল। তাহলে কিছু না কিছু আনন্দ করতে পারব।

ছগা ভাইর কথায় আমাদের মাথায় যেন হালকা বাজ পড়ল। আর শাওনের কথায় সেই বাজ যেন ভয়ংকর রূপ নিয়ে বিস্ফারিত হলো। যদিও ছগা ভাইর হিসাব পারফেক্ট। কিন্তু তা আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে অনেক কস্টের ব্যাপার। ঈদে মার্কেটিংয়ের জন্যে বেশি হলে হাজার দুয়েক পাব। ছেঁড়াফাঁটা মার্কা একটা প্যান্টই এখন হাজার পনের’শ। আসলে বিলাসিতা যে আমাদের জন্যে না, তা অনেকবার অনেকভাবে বুঝেছি। এখন আরেক বার বুঝলাম। ছগা ভাই বললেন, কী তোমরা কথা বলনা। এই শান্ত, তুই ভাবুকগিরি লাগিয়ে দিয়েছিস? বল ঠিক আছে কিনা।

আমি আমতা আমতা করে বললাম, কী বলব ছগা ভাই। পাঁচশ টাকাই থাক। আর যাদের বেশি দেয়ার খেয়াল _ তারা বেশি দিক। সমস্যা নেই।

শাওন রাগে গোঁ গোঁ করে বলল, তুই আমাকে কিটিসাইজ করছিস?

সুমনও ঝাঁঝের সাথে বলল, না না তোমাকে মাথায় তোলে জামাই আদর করছে। শালা বেআক্কেল। তোর টাকা নিয়ে তো কোন প্রবলেম নেই। বাপ ব্যবসায়ী, মা বিউটি পার্লারে চাকুরি করে। ইঁদুর মার্কা মেয়েদের ‘ক্যাছক্যাছা’ গাল মেজে ঘষে ভালই ইনকাম করছে। সব ঝামেলা তো আমাদের। পাঁচশ কীভাবে মারব, সেই টাই মাথায় ডুকছেনা। আর তুই আগেই এক ট্যাং আসমানে তুলে দিয়েছিস।

শাওন মুখ বাঁকা করে বলল, টাকা নাই, তাহলে বেড়ানোর এত শখ কেন? না বেড়ালেই তো পার!

আমি বললাম, টাকা না থাকলে বেড়ানো যাবে না? এরকম কোন আইন আছে? না বাংলাদেশের সংবিধানে উল্লেখ আছে?

শাওন বলল, তোরা এককাজ কর, তোদের টাকার দরকার। টাকা না থাকলে তো ভ্রমনটাও করতে পারবেনা। সুতরাং ঐ হাওরে গিয়ে বেশ কিছুক্ষন ডুবাডুবি কর। হয়তো ভ্রমনের টাকাটা পেয়ে যাবে। হি হি হি।

আমরা রাগে কাঁপতে থাকি। শালা আমাদের হাওরে ডুবাডুবি করার পরামর্শ দিচ্ছে। ছগা ভাই মনে হয় আমদের অবস্তা বুঝতে পারলেন। তিনি বিরক্ত ভঙ্গিতে বললেন, তোদের প্যাঁচাল পাড়াপাড়ি বন্ধ করতো। একটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাও তোরা করতে দিসনা। যাও পাঁচশ ই ফিক্সড হলো। আজ পনের রমজান, আগামি তেইশ রমজানের আগে টাকাটা জমা দিয়ে দেবে। এর ব্যতিক্রম হয়না যেন।

আমরা অবাক হয়ে বললাম, তেইশ রমজানের আগে দেব কী করে?

যেভাবেই হোক দিতে হবে। অনেক কাজ আছে। মাইক্রো ভাড়া করতে হবে। মাইক লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে। খাবারের আয়োজনটাও তো আগে ভাগে করে রাখতে হবে।

আমরা নিরবে ভাবতে থাকি। প্রথমে আম্মাকে ধরতে হবে। তাঁর মাধ্যমেই আব্বাকে ম্যানেজ করতে হবে। তারপর ছগা ভাইর হাতে পাঁচশ টাকা তোলে দেয়া। আর শুধু পাঁচশ টাকায় হবে? হাতখরচ হিসেবে তিন-চারশ লাগবেনা! সুতরাং আমদেরও অনেক কাজ।

টাকার ব্যাপার নিয়ে আমরা চিন্তিত হলেও আমাদের অনেক আনন্দ হচ্ছে। কখনো ভ্রমনে যাইনি। এবারই প্রথম। তাও বন্ধুদের সাথে। তা কি কম আনন্দের ব্যাপার! তিন আগস্ট ইন্টার পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে। আমরা ভালই পাশ করেছি। আমি আর লাভলু এ-প্লাস পেয়েছি। কিন্তু সে আনন্দ বুকে একটুও স্থান করে নিতে পারেনি। সারাক্ষণ ভ্রমনের আনন্দটা আমাদের চঞ্চল করে তোলছে। সবাইকে এই গুরুত্বপূর্ণ সংবাদটা দিতে ব্যস্ত থাকি।

শাওন পাশে থাকলেও এই ক’দিন তার সাথে আমাদের একটুও কথা হয়নি। কোন মনোমালিন্যের কারনে নয়। সারাক্ষণ মোবাইল কানে দিয়ে পটর পটর করলে কি কথা বলা যায়? শালার তিন হালি প্রেমিকা। একটু পর পর বলতে শুনা যায় ‘শুনছ জানপাখি, আমরা ঈদের দিন আনন্দ ভ্রমনে যাচ্ছি। তুমি যেতে চাও? হে হে হে’।

তার কানে মুবাইল দেখলেই আমার বুকের ভিতর ছলাৎ করে উটে। আফসোস হয়, শালার টাকা! তুমি থাকলে দশ বিশটা প্রেম একেবারে সহজ ব্যাপার। না থাকলে প্রেম নামে একটা ব্যাপার আছে বলে বুঝাই যায়না। কুচকুচে কালো জলহস্তিনি মার্কা একটা মেয়েও ভুলেই থাকায়না।

জোহর নামায পড়ে বাড়ি ফিরছি। শরিরে প্যারালাইসিস রোগির মতো অবশ ভাব হচ্ছে। কারন ছাড়া মনটা হালকা খিটখিটে হয়ে আছে। রোযার দিনে বেকার থাকা মানে ছোটখাটো আযাবের মধ্যে থাকা। শুয়ে, বসে, ঘুমে কি ভালোলাগে? শরিরে অবশ ভাব চলে আসে। মন খারাপ থাকে। কোন কাজ করতেও মন চায়না। মন সাবকে তো আর নারাজ করা চলে না। জোরেজারে আধ পারা কুরআন তিলাওয়াত করছি কিনা, বিছানা আকুল হয়ে আহবান করে শুয়ে ওম দেয়ার জন্যে। মুরগি যে রকম ডিম জড়িয়ে ওম দেয় _ সেরকমই। তবে আমি ডিম জড়িয়ে ওম দেইনা। কোল বালিশ জড়িয়ে।

কী মিস্টার ভাবুক, ভাবনা করেই তো দিন পার করে দিচ্ছ। ভালই হলো। ভাবনা না করলে কি আর পরীক্ষায় এ-প্লাস পাওয়া যায়? চারপাশের খবরা-খবর কি জানেন? না ভেবে ভেবেই জেনে ফেলেন?

স্কুলের ছোট্ট পথে দাঁড়িয়ে আছে সুমন, লাভলু, শাওন। মুখ বাঁকা করে সুমন কথাটা বলল।

আমি তাদের দিকে গভির দৃষ্টিতে তাকাই। মনোভাব বুঝার চেষ্টা করি। তাদের গোমড়া মুখ বলে দিচ্ছে, খারাপ খবর আছে। কাল কিংবা পরশু ঈদ। আমাদের মহা আকাঙ্ক্ষার দিন। যে দিনের অপেক্ষায় সবাই অপেক্ষমান। সেখানে তাদের এই গোমড়া মুখ, , , , ব্যাপারটা মাথায় ঢুকছেনা।

কী ব্যাপার, কথা বলছেননা কেন? নাকি আমরা আপনার মূল্যবান ভাবনার ব্যাঘাত ঘটানোর কারন হচ্ছি? তাহলে সরি। আমরা চলে যাচ্ছি।

চলে যাবার কথা বললেও তারা কিন্তু যাচ্ছেনা। সুমনের টাট্টাপূর্ণ কথায় আমার ভয়ংকর রাগ হচ্ছে। প্রথমেই রাগ দেখানো উচিৎ হবেনা ভেবে শান্ত ভঙ্গিতে বললাম, হয়েছেটা কী বলত? কোন প্রবলেম?

সুমন ভ্রুকুঁচকে রাগি স্বরে বলল, তোকে কি বলব বলত! কোন কিছুর খোজ-খবর রাখছ?

আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, প্যানপ্যানানী বাদ দিয়ে আসল কথাটা বলল। নইলে থাক, আমি চলে যাচ্ছি। তোরা তোদের দেশ-বিদেশের খবর নিয়েই থাক। এসবের আমার প্রয়োজন নেই।

শাওন বলল, দেখ শান্ত, আগামীকাল ঈদ। ভ্রমনের জন্যে আমদের প্রস্তুত থাকতে হবেনা? আর ছগা ভাই অনেক আগেই চাঁদা তুলেছে আগে আগে সব ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতে। তাই না!

আমি বললাম, অবশ্যই। তিনি তো সব করবেন। কিন্তু তোদের মাথা ব্যাথা কেন?

সুমন বলল, এটা তো আমরা জানি। এখন তোর ছগা ভাই কোথায়, বের কর।

কেন ছগা ভাই বাড়িতে নেই?

ছগা ভাই পাঁচ দিন ধরে নিখোজ। কোথায় আছে কেউ জানেনা। এজন্য আমরা মাথা ঘামাচ্ছি। বুঝলে!

ছগা ভাই কিছুদিন থেকে আড্ডায় আসছেননা, এখন মনে পড়ল। আর এজন্য আমাদের রাতের আড্ডাটা অসম্পূর্ণ মনে হতো।

আমি অন্যদিকে চেয়ে বললাম, হয়তো কোথাও না জানিয়ে গেছেন। আজ বিকেলে চলে আসবেন।

আমার কথায় সুমনের মনে হয় ভয়ংকর রাগ হলো। চোখ লাল করে বলল, আসলে তুই একটা সেন্সহীন গাধা। ঐ ছগার বাচ্ছা বলল না! গতকাল মানে আটাইশ রমজান মাইক্রো ভাড়া করতে যাবে। সঙ্গে আমি আর শাওন যেতে। আজ কি কোন গাড়ি পাবে? লাথি মারলে উলটে যাওয়া টমটমিও তো পাবেনা। এরপর রয়ে গেল, মাইক ভাড়া, ডিভিডি ভাড়া।

আমি ব্যাপারটা বুঝলাম। কী করা যায় চিন্তা করতে থাকি। শাওনের দিকে চেয়ে বললাম ছগা ভাইকে কল দিয়েছিস?

দিয়েছি মানে গতকাল থেকে কল দিয়েই যাচ্ছি। কিন্তু ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।

এখন আবার দে তো দেখি। শাওন ফোন দেয়। সুমন গজ গজ করতে থাকে। রাতদিন কল দিচ্ছি। ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। এখন নবাব সলিমুল্লাহ’র কথায় ফোন খুলে যাবে? যত্তসব।

শাওন চঞ্চল হয়ে বলল, চুপ চুপ। কল যাচ্ছে।

আমি বললাম লাউড স্পীকার দে।

ছগাভাইর গলা শুনা যাচ্ছে। শাওন, কিছু দরকার?

ছগা ভাই তুমি কই?

আমি এখন মৌলভীবাজার। বলতে পার, মাধবকুন্ডের কাছাকছি।

তা তুমি কখন আসবে। আমরা ভ্রমনের জন্যে রেডি হতে হবেনা!

তা রেডি হও। সমস্যা কী? আর আমি বেশি না, তিন মাস মানে নব্বইদিন পরে আসব। হে হে হে।

লাইন কেটে যায়া। শাওন বারবার ট্রাই করে। ফোন বন্ধ।

আমার মনটা সম্পূর্ণ খারাপ হয়ে গেল। রোযার দিনে একটি ব্যাপার আমি লক্ষ করেছি, যে কোন কাজ কেউ একটু করলে তার আরো করতে মন চায়। কাজটা ভালো হোক কিংবা খারাপ। আমার মন খারাপ ভাবটা দ্রুত বাড়ছে। এর আছর শরিরে এসে লাগছে। কারন শরির বুড়া মানুষের মতো কাঁপছে।

ছগা ভাইর গুম হওয়ার বিষয়টা আমি জানি। তেইশ রমজান তার কাছে টাকা দিতে যাই। কথা প্রসঙ্গে বললাম, ছগা ভাই, আগামি কাল তো রিজাল্ট বের হবে। গত বারের মতো এবারও ফেল করলে কী করবে?

তিনি তার সব ক’টি দাত বের করে হে হে হে করে বললেন, ফুটুস হয়ে যাব। তিন-চার মাস পর আসব। এর মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে। বাপ-মা মরা এতিম ভাই। ভাইয়েরা কি ফেলে দেবে?

বন্ধু মহলে আমি ভাবুক বলে পরিচিত। যে কোন বিষয়ে আমি অতি দ্রুত ভেবে নেই। ঝামেলা হলে তা মিটিয়ে ফেলি। অনেক সময় বেহুদা জিনিস নিয়েও ভাবতে ভাবতে মাথা খারাপ করে ফেলি। মনে হয় এই প্রথম একটা ব্যাপার গেল, যা আমি ভাবিনি।

কিরে তুই বল না! এভাবে শূন্যে তাকিয়ে ভাবলে চলবে?

শাওনের কথায় বাস্তবে ফিরে আসি। আবার নিরব কিছু সময় থেকে নির্বিকার কন্ঠে বললাম, তাহলে আর কী হবে? মনে কর পাঁচশ টাকা গচ্ছায় গেছে।

আমি হাঁটা ধরলাম। শাওন আমার হাত ধরে বলল, এখন কী হবেরে শান্ত!

বললাম তো পাঁচশ গচ্ছায় গেছে। এখন টেনশন করে লাভ আছে?

শাওন কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, আরে আমি পাঁচশ টাকার চিন্তা করছি নাকি।

তবে?

পাঁচ হাজার টাকা।

আমি ভ্রুকুঁচকে বললাম, পাঁচ হাজার মানে?

তোকে মূল ঘটনা বলি। পরীক্ষার ফল বেরোনোর দিন সকাল বেলা দেখি, ছগা ভাই আমাদের বাড়িতে এসেছেন। আমি খুব অবাক হলাম। কারন আমার বন্ধুরা কেউ আমাদের বাড়ি আসেনা। আর ছগা ভাই আমাদের বাড়ির রাস্তাই চিনেন কিনা সন্দেহ আছে। কি জন্যে আসছেন জিজ্ঞেস করলাম। তিনি আকুল হয়ে বললেন, তুই আমার একটা উপকার কর। আমি বললাম কী? তিনি বললেন, তুই আমাকে পাঁচ হাজার টাকা দে। আমি বললাম, আমার কাছে তো কোন টাকা পয়সা নেই। তিনি বললেন, যে কোনভাবে তুই দে। আমি বললাম, নেই তো আমার কাছে। থাকলে তো দিতাম। তখন তিনি মুচকি হেসে বললেন, তোর কাছে টাকা নেই, সেটা আমাকে তুই বিশ্বাস করতে বলিসনা। যে করেই হোক তুই টাকাটা দে। আটাইশ রমজান দিয়ে দেব। সেদিন তো আমরা একসাথে মাইক্রো, মাইক ভাড়া করতে যাব। তখনি দিয়ে দেব।

তার জুরাজুরিতে শেষমেশ টাকাটা দিতে বাধ্য হই। টাকাটা ঈদের কেনাকাটার। আর এখনো আমার অর্ধেক কেনাকাটা বাকি আছে। এই ভেবে দিলাম যে, আটাইশ রমজান তো পেয়ে যাচ্ছি। তখন না হয়, বাকি কেনাকাটা করব। টাকা ধার দেয়ার কথা আব্বু শুনলে, আমাকে কী পিটুনী যে দেবে। এমনিতেই আব্বু কর্জ-টর্জ একেবারে ভালো পাননা।

আমার মনটা চূড়ান্ত পর্যায়ের খারাপ হলো। ইচ্ছে হচ্ছে, ছগা ভাইর বাড়ি গিয়ে সব কিছু তছনছ করে ফেলতে। মাথা বনবন করছে। তালা থাকলে হয়তো, তালা ঝনঝন করত।

আমি কোন রকমে বললাম, অর্ধেক কেনাকাটা তোর এখনো রয়েছে। তাই না! আর কেনাকাটা করতে টাকা লাগবে। এককাজ কর, ঐ যে হাওর দেখছিস না? ওখানে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ডুবাডুবি কর। হয়তো কেনাকাটার জন্যে টাকা পেয়ে যাবে।

Comments

  1. অইছে মুটামুটি। চালাও।

    ReplyDelete
  2. অইছে মুটামুটি। চালাও।

    ReplyDelete

Post a Comment